ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

চকরিয়ায় ৩ হাজার হিন্দু পরিবারের জনবসতি রক্ষার্থে অবৈধ বালুদস্যুদের গ্রেফতার দাবি

12144705_889534974455838_5989135785643671443_nChakaria Picture 21-07-2016,,এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘুনিয়া এলাকার অন্তত তিন হাজার হিন্দু পরিবারের জনবসতি, আবাদি জমি রক্ষার্থে অবিলম্বে মাতামুহুরী নদীর চর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে জড়িত সাবেক কাউন্সিলর লক্ষণ দাশকে গ্রেফতারের দাবী করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ। গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বিকালে চকরিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবী করেন। তাকে গ্রেফতার না করলে তাঁরা আগামীতে এব্যাপারে আন্দোলনের নানা কর্মসূচী দেবেন বলে হুশিয়ারি দেন।

হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেছেন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর লক্ষণ দাশ প্রভাব খাটিয়ে মাতামুহুরী নদীর চর থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে নেয়ায় উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। গতবছর উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে নির্মিত বেড়িবাঁধের পাদদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে নেয়ার কারনে ওই এলাকার জনবসতির পাশাপাশি বহু স্থাপনা, মন্দির, ক্যাং ঘর, শশ্বান ও প্রতিষ্টান ভাঙনের মুখে পড়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্টানসহ হাজার হাজার ঘর নদী ভাঙনের ঝুকিতে পড়ে।

সংবাদ সম্মেলনে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি মেম্বার অণিমেষ রঞ্জন দে জানান, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন কাবিখা’র বরাদ্ধ দিয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর ব্যবস্থাপনায় ইউনিয়নের ঘুনিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বেড়িবাঁধটি নির্মাণের কারণে এখন ওই এলাকায় নদীতে কিছু চরও জেগে উঠেছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পাশে চর জেগে উঠায় ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ভিটে মাটি, মন্দির শশ্বান রক্ষা করতে পেরেছে। কিন্তু চকরিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা সাবেক কাউন্সিলর লক্ষণ দাশ জেগে উঠা চর থেকে গত কিছুদিন ধরে এস্কেভেটর দিয়ে কেটে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ তাতে বাঁধা দেন। কিন্তু লক্ষণ দাশ তা অগ্রাহ্য করে বালি উত্তোলন অব্যাহত রাখেন।

এ ঘটনায় ইউপি মেম্বার অনিমেষ রঞ্জন দে এলাকাবাসির পক্ষ হয়ে গত ১৭ জুলাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৮ জুলাই চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহাবুব উল করিমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত একটি এক্সকেভেটর জব্ধ করেন। তিনি এক্সকেভেটরটি স্থানীয় চকিদার দফদারদের জিন্মায় দেন।

ইউপি মেম্বার অণিমেষ রঞ্জন দে জানান, এতে লক্ষণ দাশ ক্ষিপ্ত হয়ে ১৯ জুলাই আবার জব্ধ করা ওই এক্সকেভেটর দিয়ে আবারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের চেষ্টা করেন। এসময় তার লোকজন স্থানীয়দের উপর হামলা করে। এতে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসি আহত হন। এক পর্যায়ে লক্ষণ দাশের সহযোগিরা বেপরোয়া হয়ে হামলা শুরু করলে এলাকাবাসি বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সন্ধ্যারপর আবারও লক্ষণ ও তার লোকজন বালু উত্তোলন করার চেষ্টা করলে কে বা কারা ওই এক্সকেভেটর টিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এদিনের ঘটনায় ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী’র কোন ধরণের সম্পৃক্তা নেই। তিনি ওই দিন ওই সময় চকরিয়া উপজেলা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ কমিটির এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, লক্ষণ দাশ একজন মাদকসক্ত লোক। তিনি চকরিয়া পৌরসভা এলাকা থেকে ঘুনিয়ায় গিয়ে সেখানে মাতামুহুরীর তীরে একটি টংঘর নির্মাণ করেছেন। ওই টংঘরে বসেই মাদক সেবন, অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে। ওই টং ঘরে দিনরাত জুয়ার আসর বসে। ওই এলাকায় অপরিচিত লোকজন ও সন্ত্রাসীদের আনাগোনায় এলাকার সাধারণ মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠে। সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ লক্ষণ দাশকে গ্রেফতার করে ওই এলাকাকে বন্যার হাত থেকে ও সন্ত্রাসীদের কবল থেকে রক্ষা করার দাবী জানিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, চকরিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ, সাধারণ সম্পাদক বাবলা দেব নাথ, সহসভাপতি উত্তম দাশ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তপন সুশীল, চকরিয়া জুয়েলারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুনিল কান্তি দাশ, চকরিয়া পৌরসভা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি টিটু কুমার বসাক, সাধারণ সম্পাদক নিলুৎফুল দাশ, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অনুকুল দাশ, সাধারণ সম্পাদক নর উত্তম দাশ, রণধীর দাশ, মিটন দে প্রমুখ। #

পাঠকের মতামত: